ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন নির্দিষ্ট সময়ে এবং একটা নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয় কেনো !!! এর গঠন কীরূপ থাকে !!!!- এই প্রশ্ন অনেকের রয়েছে । আজ সেই বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক ।
সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখি যে বর্ষা আসার আগে এপ্রিল থেকে মে মাস এবং বর্ষা বিদায়ের পর অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে বঙ্গোপসাগরসহ যেকোনো মহাসাগর অনুকূল থাকলে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন হুটহাট করে সৃষ্টি হয় না। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭°সে এর উপরে থাকা প্রয়োজন। বঙ্গোপসাগরে অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি ঘটে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে। সাধারণত ৫° উত্তর থেকে ৩০° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে ৩০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলির উৎপত্তি ঘটে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ক্ষেত্রে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন বলয় (Inter-tropical Convergence zone) – এর কিছু ভূমিকা রয়েছে। আন্তঃক্রান্তীয় মিলন বলয়ের অবস্থান হল বিষুবরেখার কাছাকাছি, যেখানে দুই গোলারধের বায়ুপ্রবাহ এসে মিলিত হয়, তবে এর অবস্থান ঋতুভেদের ওপর নির্ভর করে। একটি ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর আবর্তন থেকে সৃষ্ট ‘কোরিওলিস ফোর্স’ থেকে তার ঘূর্ণায়মান গতি প্রাপ্ত হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বিস্ময়কর গাঠনিক চিত্র হল এর ‘চোখ’। ঘূর্ণিঝড়ের চোখের মতো অংশটি ক্ষুদ্র এবং প্রায় বৃত্তাকার বা কখনও এটি চ্যাপ্টা হয়। এ অঞ্চলের ব্যাস থাকে ৮-৫০ কিমি। চোখে বায়ুচাপ থাকে সর্বনিম্ন এবং তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ যত উষ্ণ থাকে ঝড় ততো বেশি শক্তিশালী হয়। চোখে বায়ুপ্রবাহ থাকে খুবই হালকা (সাধারণত ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিমি-এর বেশি নয়) এবং মেঘ থাকে না বললেই চলে। এর বিপরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায় চোখটির পরিসীমার বাইরে প্রায় ১০-২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায যাকে চোখ-দেয়াল বা বায়ু বলয় বলা হয়। এখানে বাতাসের বেগ এবং বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি। চোখ-দেয়ালের বাইরের সীমানা থেকে বাতাসের বেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঘূর্ণিঝড়ের মূল কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি সাধারণত বৃত্তাকার অথবা প্রায় বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস ২০০ থেকে ২০০০ কিমি বা তারও বেশি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড়গুলি প্রায়শই কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গে একটি লম্বা লেজের মতো অঞ্চল নিয়ে আবর্তিত হয় এবং এ প্রলম্বিত অংশে একাধিক বলয় থাকে। সমগ্র বিষয়টি একটি সর্পিলাকার কাঠামো তৈরি করে যা অনেকটা ‘উল্টানো কমা’ বা ‘উদ্ধার চিহ্নের’ মত। ঘূর্ণিঝড়ের লেজটি কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের লেজের মতো অংশটি সাধারণত প্রাণকেন্দ্র বা মুল অংশটির পূর্বেই ভূমিকে অতিক্রম করে যার ফলে ঝড়ের পূর্বে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় এবং ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার শুরুতে প্রায়শই বৃষ্টিপাত ঘটে। এধরনের লক্ষণ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেত হয়।
ধন্যবাদ
নেচার এন্ড ওয়েদার ওয়ার্ল্ড
তথ্যসূত্র : জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন (ইউএসএ)