ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় কীভাবে?
একটু সহজ সরল ভাবে বোঝার চেষ্টা করি ঘূর্ণিঝড় কিভাবে সৃষ্টি হয়!!
লঘুচাপ, লঘুচাপ মানে আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় কোনো জায়গায় বায়ুর চাপ কম থাকা। জল-স্থলের সংযোগস্থলে এ রকম হয়। এটা হয় কীভাবে?
দিনের বেলা সূর্যের তাপের কারণে স্থল বা মাটি জলের থেকে বেশি উত্তপ্ত বা উষ্ণ থাকে। এর কারণ, জলে যে পরিমাণ সূর্যের তাপ পড়ে, তার বেশির ভাগ প্রতিফলিত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। মাটি এত তাপ প্রতিফলিত করতে পারে না। ফলে উষ্ণ হয়ে ওঠে।
এই উষ্ণ মাটি আবার ওপরে থাকা বায়ুর তাপ বাড়িয়ে দেয়। তাপ বাড়লে বায়ুর অণুগুলো একে অন্যের চেয়ে তুলনামূলক দূরে সরে যায়। অর্থাৎ বাতাসের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে বাতাস হয়ে যায় হালকা। এই উষ্ণ, হালকা বায়ু ওপরের দিকে উঠে গেলে নিচের অংশটা ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে ওই জায়গাটায় তৈরি হয় লঘুচাপ।
ওদিকে সমুদ্রের উপরিতলে চলছে উল্টো ঘটনা। সমুদ্রের ওপরের বাতাস যেহেতু তুলনামূলক শীতল, তাই এর অণুগুলো কাছাকাছি অবস্থান করে। বায়ুর ঘনত্ব যায় বেড়ে। এই ভারী বায়ু নেমে আসে নিচের দিকে। ফলে সমুদ্রের ওপর বায়ুর চাপ েড়ে যায়।
এখন পাশাপাশি যদি দুটো ঘটনার কথা ভাবি, একদিকে লঘুচাপ অঞ্চলের হালকা বাতাস ওপরের দিকে উঠে গেল। অন্যদিকে আশপাশের উচ্চ চাপ অঞ্চলের শীতল, ভারী বায়ু ছুটে আসতে শুরু করেছে এই লঘুচাপ অঞ্চলের দিকে। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই সৃষ্টি হয় ঘূর্ণি।
রাতের বেলা আবার উল্টো ঘটনা ঘটে। জলের তাপধারণের ক্ষমতা বেশি। তাই রাতের বেলা মাটি দ্রুত সব তাপ বিকিরণ করে দেওয়ার পরও আশপাশের জল তাপ ধরে রাখে। ফলে রাতে মাটি হয়ে যায় তুলনামূলক ঠান্ডা। আর সমুদ্রের জল হয়ে থাকে তুলনামূলক উষ্ণ। এর ফলে রাতের বেলা সমুদ্রের ওপর লঘুচাপ তৈরি হয়। আর মাটির ওপরের উচ্চ চাপের বায়ু সেদিকে ছুটে যেতে থাকে। এর ফলেও তৈরি হয় ঘূর্ণি।
সাধারণত সমুদ্রে যেখানে এ রকম হয়, তার কেন্দ্রের চারপাশের বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ১৭ থেকে ৩০ কিলোমিটার হয়, তাহলে তাকে বলে লঘুচাপ। আর এই লঘুচাপের শক্তি বেড়ে গিয়ে যখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩১ থেকে ৪০ কিলোমিটার হয়ে যায়, তখন সেটা পরিণত হয় নিম্নচাপে। অর্থাৎ লঘুচাপের আরও ভয়ংকর রূপ হলো নিম্নচাপ।
এই যে নিম্নচাপ তৈরি হলো, সেটা কিন্তু এক জায়গায় স্থির থাকে না। আশপাশের কোনো অঞ্চলের উচ্চ চাপের তুলনায় তার শক্তি যদি বেশি হয়, তখন এটি ওই অঞ্চলের দিকে যেতে থাকে। নিম্নচাপ আসলে ঘূর্ণিবায়ুর প্রবাহ। তাই এটি যেদিকে গিয়ে স্থির হবে বা যেখানে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করবে, সেখানে হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। জল-স্থল যেখানে পাশাপাশি, সেখানে নিয়মিত হারে লঘুচাপ, নিম্নচাপ ইত্যাদি তৈরি হয়। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের জল এতে শক্তি জোগায়।
ধন্যবাদ
নেচার এন্ড ওয়েদার ওয়ার্ল্ড