বর্তমান সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা বৃদ্ধির কারণ!!
দেশে বছরে বজ্রপাতের ঘটনায় গড়ে প্রতিবছর ২৫০০ জনের মৃত্যু হয় । আর বজ্রপাতের ঘটনা চার লক্ষের অধিক । সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা উত্তর-পূর্ব ভারত ও ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চল। বলা চলে বজ্রপাতের হটস্পট হয়ে উঠেছে এই অঞ্চল গুলো।
বর্তমান সময়ে বাতাসে দূষণ, ধূলিকণার পরিমাণ বেড়েছে। সেই সঙ্গেই বেড়েছে তাপমাত্রা। এই দুই কারণের জন্য বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে বেশি। বাতাসে জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণার পরিমাণ বাড়ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে অনেক বেশি বাতাস নীচ থেকে উপরে উঠে থান্ডার ক্লাউড তৈরি করছে। ফলে মেঘ থেকে ভূমিতে বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়ছে।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যদি বেশি হয় এবং চারপাশে পরিবেশের তাপমাত্রা যদি বাড়ে, তাহলে সেই আর্দ্র ও উত্তপ্ত বায়ু দ্রুতগতিতে ঠান্ডা হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে। দেখা যায়, বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশের তাপমাত্রা নীচের তুলনায় কম থাকে। তাই এই বজ্রগর্ভ মেঘের প্রবাহ নীচ থেকে উপরের দিকে হয়, যাকে বলে থান্ডার ক্লাউড। এই মেঘের মধ্যে জলীয় বাষ্পের বাড়তে থাকলে তাদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হয়, ফলে ছোট ছোট জলকণা, তুষারকণা তৈরি হয়। এদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলেই বৈদ্যুতিক আধান তৈরি হয়। খন জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পাঁচ মিলিমিটার ছাড়িয়ে যায় যখন জলের অনুগুলো আলাদা হয়ে তড়িৎ ধণাত্মক ও ঋণাত্মক আধান তৈরি করে। ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি হয়। আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়।
সাধারণত, বায়ু তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। তাহলে বজ্রপাত হয় কী করে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বজ্রগর্ভ মেঘের নীচের অংশে জলীয় বাষ্প ও তুষারকণার পরিমাণ বেশি থাকে। সেখানে জলকণায় সংঘর্ষ বেশি হয়, তুলনায় উপরের দিকে কম হয়। ফলে মেঘের নীচের দিকে নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেশি থাকে, আর উপরের দিকে থাকে পজিটিভ চার্জ। এই দুই বিপরীতধর্মী চার্জের প্রতিক্রিয়ায় শক্তিশালী বিদ্যুৎ ক্ষেত্র তৈরি করে। তবে এই বিদ্যুৎ ক্ষেত্র মেঘের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
এখন বজ্রপাত তখনই হয় যখন মেঘের মধ্যে এই তড়িৎ ঋণাত্মক বা ইলেকট্রন চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়, বিপরীতে মাটিতে তড়িৎ ধণাত্মক চার্জ জমা হয়। বজ্রগর্ভ মেঘ ও মাটিতে তৈরি হওয়া দুই বিপরীতধর্মী চার্জের পরিমাণ বাড়লে মাঝের বাতাসের বাধা অতিক্রম করে একটি লাইন তৈরি হয়, যাকে বলে স্টেপড লিডার। মেঘে যে শক্তিশালী ক্ষেত্র তৈরি হয় তার প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০ হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ শক্তি থাকে। ফলে চারপাশের বাতাসও আয়নিত হয়ে যায়। ফলে এই পথেই মেঘ থেকে বিদ্যুৎ শক্তি মাটিতে নেমে আসে। তখন আমরা বলি বজ্রপাত হয়েছে। সাধারণত গাছপালা, উঁচু বাড়ি, টাওয়ার ইত্যাদি বেয়ে মাটি থেকে তড়িৎ ধণাত্মক চার্জ ওপরে উঠে মেঘের তড়িৎ ঋণাত্মক চার্জের সঙ্গে ওই লাইন তৈরি করে। তাই দেখা যায়, গাছের ওপর বা টাওয়ারের ওপর অথবা ফাঁকা জায়গায় বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে।