উষ্ণতম বছর !!! হুমকির মুখে সমগ্র পৃথিবী

পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার জন্য শীতের তুলনায় গ্রীষ্মের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি ঋতুর আগমন অনিয়মিত ও বিলম্বিত হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খরার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।

সাল ২০২৩, এল নিনো এর প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক বছরেই ০.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমান বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এখনি বৃদ্ধি হয়েছে, যা বিপদের অশনি সঙ্কেত বলা যেতেই পারে । বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশ গুলোর জন্য । এই উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ফলে আমাদের পরিবেশ এবং জীবজগতের উপর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি মাটি শুষ্ক করে ফেলছে এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। এর ফলে ভূমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে এবং খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে।

বিপদ ঠিক কোথায়!!!!
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মি ও পৃথিবী থেকে বিকিরিত সৌরতাপ শক্তির পরিমাণের মধ্যে বৈষম্য ঘটে । ফলে পৃথিবীর উষ্ণতার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় । ফলে খরা ও বন্যা, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও দাবানলের প্রকোপ বহুগুণ বৃদ্ধি পায় । যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে ভয়ংকর টর্নেডো ঘূর্নিঝড় এবং অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের প্রাদুর্ভাব বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠবে । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাবে ও ভৌমজলের ভাণ্ডারে টান পড়তে শুরু করেছে। এইভাবে আগামীদিনে অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে ও সমগ্র বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বৃষ্টিপাতের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটছে, বৃষ্টিপাতের বন্টনেও চরম অসাম্য দেখা দিয়েছে । ফলে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে । অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয়ে কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলের যোগান বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১° সে. বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেমি. বৃদ্ধি পেয়েছে । এর ফলে পৃথিবীর নিম্ন উপকূল অঞ্চলসমূহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতাসম্পন্ন দ্বীপগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হবে ।

ভূমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহের গলন ঘটবে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলস্বরূপ সমুদ্র উপকূলভাগের নীচু অংশ জলমগ্ন হবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও অনুর্বর হয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাস্পীভবনের হার ও বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির তীব্রতা বেড়েছে। অধঃক্ষেপণের বণ্টনে যথেষ্ট অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছে, অর্থাৎ শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বন্যা এবং আর্দ্র অঞ্চলগুলিতে খরা দেখা দিচ্ছে।

মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রোজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয় । বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ।

✒️ Nature & Weather World