ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব রক্ষায় ঢাল বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন !!!
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব থেকে ফের উপকূলকে রক্ষা করতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ বনের কারণেই উপকূল এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের জল, দমকা বাতাস প্রবল বেগে প্রবেশ করতে পারে না। উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড় রেমালের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার, কিন্তু সুন্দরবনের গাছপালার কারণে সেটির প্রভাব ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারের মতো অনুভূত হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার ছিল, সেটা বন পার হয়ে লোকালয়ে যেতে যেতে শক্তি হারিয়ে দমকা বাতাসে রূপ নেয়। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস লোকালয়ে পৌঁছানোর আগে সুন্দরবনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক কমে যায়। এ কারণে উপকূলীয় এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মূলত সুন্দরবনের ওপর দিয়ে দুই ধরনের ধাক্কা খায়। প্রথমত তীব্রগতির বাতাস ও এরপর জলোচ্ছ্বাস। উপকূলীয় এলাকা থেকে বড় বড় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে এর আগেও ঢাল হিসেবে কাজ করেছে সুন্দরবন। বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার তাণ্ডব থেকে এই বন উপকূলকে রক্ষা করেছে। যদিও সেই দুর্যোগে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছিল বনাঞ্চল। বনাঞ্চলের সর্বাধিক ক্ষতিসাধন করেছিল সুপার সাইক্লোন আমফান।
পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকারী হিসাবে রাজ্যের ২৪ টি ব্লক। ৭৯ টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত। বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (মোট) ১৪,৯৪১টি। যার মধ্যে আংশিক: ১৩৯৩৮, সম্পূর্ন: ১০০৩ (যদিও এই হিসেব বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে প্রশাসন)। রেমালের তাণ্ডবে গাছ পড়েছে ২১৪০ টি। বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছে ৩৬৭ টি।
এখনও পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়-বৃষ্টির প্রকোপ থেকে বাঁচতে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ২০৭০৬০ জনকে। যার মধ্যে বর্তমানে ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন ৭৭২৮৮ জন। মোট ১৪৩৮ টি ত্রাণ শিবির চলছে। গ্রুয়েল কিচেন চলছে ৩৪১ টি। এখনও পর্যন্ত মোট ১৭৭৩৯টি ত্রিপল বিলি হয়েছে। এখানে বলে রাখা দরকার যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সর্বোচ্চ গতিবেগ পশ্চিমবঙ্গে ১০০ কিমি প্রতি ঘন্টায় ছিল পাথরপ্রতিমার সমূদ্র উপকূলে। ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে কতটা প্রভাব পড়েছে তার হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি ।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল ও পরবর্তী গভীর নিম্নচাপের প্রভাব বাংলাদেশের ৪৫ ঘণ্টার ও বেশি রয়েছে । এর আগে ২০০৯ সালে আয়লা ঝড় বাংলাদেশে ৩৪ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়েছিল। বাংলাদেশের রাত দেড়টা থেকে ২টোর সময়ই সবথেকে বেশি ছিল ঝড়ের দাপট। সেই সময় ১১১ কিলোমিটার গতিতে ঝড় বয়ে গিয়েছিল পটুয়াখালির খুপেপাড়ায়। ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে নোনা জলে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১০ জন মানুষের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে । এছাড়া ঝড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৫৭টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ১০৭টি ইউনিয়ন ও ৯১৪টি পৌরসভার ৩৫ হাজার ৪৮৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত।