বজ্রপাতের সংখ্যায় বৃদ্ধি কেনো !!! সমুদ্রে বজ্রপাত বেশি তীব্র ও সংখ্যায় অধিক কেন স্থলভাগের থেকে !!!!!

আমাদের দেশে সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এবং আশ্বিন-কার্তিকে ঝড়বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চমকায় বেশি এবং বজ্রপাত ভয়াবহ আকারে হয়। প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। কিন্তু স্থলভাগের চেয়ে সমুদ্রবক্ষে বজ্র-বিদ্যুৎ বেশি তীব্র ও সংখ্যায় অধিক হয়। সাগরে বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি চোখধাঁধানো। আবার বজ্রপাতের প্রতাপও মারাত্মক। কেন এত পার্থক্য? এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে, মহাসাগরে বজ্রপাতের সময় যে বিদ্যুতের ঝলক সৃষ্টি হয়, তা স্থলভাগের বিদ্যুতের চেয়ে ১০০ থেকে ১০০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল ও শক্তিশালী। একে বলা হয় ‘সুপারবোল্ট’! কেন এই বিরাট পার্থক্য, তা নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।

আমেরিকান মেটিওরোলজিক্যাল সোসাইটির এক নিবন্ধ থেকে পাওয়া যায় এক সমুদ্রবিজ্ঞানী জলের রসায়ন কীভাবে বজ্র-বিদ্যুৎকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে গবেষণা করেন। পরীক্ষাগারে একটি ছোট বাক্সে লবণাক্ত জল নিয়ে পরীক্ষায় এক অভাবিত ফল পাওয়া যায়। লবণাক্ত জলে বজ্র-বিদ্যুৎ বেশি শক্তিশালী। আগে ধারণা করা হতো, মেঘ ও বজ্রপাতের ধরনের পার্থক্যের জন্য এটা হয়।

কিন্তু ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় বিষয়টির অন্য এক তাৎপর্য সামনে এল। এরপর বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সাগর, নদী ও পুকুরের জলের নমুনা সংগ্রহ করলেন। পরীক্ষায় দেখা গেল, জল যত বেশি লবণাক্ত, বজ্র-বিদ্যুতের আঘাত তত বেশি। ডেড সির জল সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত। এর জল গ্যালিলি সাগরের জলের চেয়ে ৬৮০ গুণ বেশি লবণাক্ত। ডেড সির জলের ওপর সৃষ্ট বিদ্যুতের ঝলক গ্যালিলির তুলনায় ৪০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। আবার গ্যালিলির জলের ওপর সৃষ্ট বিদ্যুতের ঝলক ভেজা মাটির তুলনায় দেড় গুণ বেশি উজ্জ্বল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে প্রশান্ত মহাসাগরের কোনো কোনো অংশে তীব্র বিদ্যুৎ-বজ্রাঘাত, তথা সুপারবোল্টের আশঙ্কা বাড়তে পারে (প্রভাব সমগ্র বিশ্ব জুড়েই পরার সম্ভাবনা) । কারণ, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সাগরের কোনো কোনো অংশে বেশি জল বাষ্পীভূত হচ্ছে এবং সে কারণে সেখানে লবণাক্ততা বেশি হারে বাড়ছে। তাই ওই সব অঞ্চলে বেশি তীব্র বজ্রাঘাতের আশঙ্কা রয়েছে আগামি দিনে।

সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন বঙ্গোপসাগর । পরিবেশ দূষণ ও উষ্ণতা বৃদ্ধির সর্বাধিক প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে । আগামীদিনে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । এই দূষণ ও উষ্ণতার আবর্তে বঙ্গোপসাগরে জল বাষ্পীভূত হচ্ছে অধিক পরিমাণে যার ফলে সমুদ্র আরও লবণাক্ত হয়ে উঠছে । সাথে বাড়ছে বজ্রপাতের সংখ্যায় বৃদ্ধির আশঙ্কা । এই আশঙ্কা যে আমূলক নয় তার প্রমাণ জুলাই মাসে পুরীর সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিমি সমুদ্র গভীরে মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে এক লপ্তে প্রায় হাজারেরও বেশি বজ্রপাত । সমুদ্রে শুধু নয়, অদূর ভবিষ্যতে সমূদ্র নিকটবর্তী স্থলভূমিতে ভয়াবহ বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

আশঙ্কা কখনও আতঙ্কিত করার জন্য হয় না, আশঙ্কা সচেতন করার জন্য প্রকাশ করা হয় । নেচার এন্ড ওয়েদার ওয়ার্ল্ড পরিবেশ সংক্রান্ত সকল আশঙ্কাকে সকলের সামনে আনতে বদ্ধপরিকর । আতঙ্কে নয় সচেতন থাকুন বাকিদের ও সচেতন করুন । আমরা সবাই মিলে পরিবেশ রক্ষায় হাতে হাত মোই যাতে মানব সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ রোধে সক্ষম হতে পারি ।

ধন্যবাদ
নেচার এন্ড ওয়েদার ওয়ার্ল্ড

বজ্রপাত সংখ্যায় বৃদ্ধি
বজ্রপাত সংখ্যায় বৃদ্ধি

Photo Gallery

Get A Quote

[contact-form-7 id="7c0c075" title="Contact form 1" html_class="rd-mailform1"]